
- মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কেউ হয়তো অনেক ভালো করেছে, কেউ হয়তো নিজের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। কিন্তু এটা মনে রাখো—এই একটি পরীক্ষা তোমার পুরো জীবনের সিদ্ধান্ত নয়। বরং এটা হলো তোমার ভবিষ্যতের যাত্রার প্রথম ধাপ। এখন সময় নিজের স্বপ্ন আর লক্ষ্যের দিকে একধাপ এগিয়ে যাওয়ার।
- এই লেখায় আমরা জানব কীভাবে একজন মাধ্যমিক পাস ছাত্রছাত্রী নিজের আগ্রহ, দক্ষতা এবং ভবিষ্যতের লক্ষ্য অনুযায়ী সঠিক পথ বেছে নিতে পারে।

১. নিজেকে জানো – নিজের প্রতি সৎ হও
ক্যারিয়ার গড়ার আগে সবচেয়ে দরকারি কাজ হলো নিজেকে জানা। তুমি কী ভালোবাসো? কোন বিষয়ের প্রতি আগ্রহ তোমার বেশি? তোমার শক্তি কোথায়? তুমি যদি বিজ্ঞান ভালোবাসো তবে তার পিছনে এগিয়ে যাও, যদি মানুষের সঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগে তবে সমাজবিজ্ঞান বা মনোবিজ্ঞান নিতে পারো।
অনেক সময় আমরা অন্যের দেখাদেখি সিদ্ধান্ত নিই, যেমন “সে সায়েন্স নিয়েছে, আমিও তাই নেব।” কিন্তু এটা ভুল। তোমার পথ তোমাকেই বেছে নিতে হবে।

২. স্ট্রিম নির্বাচন – ভবিষ্যতের ভিত্তি
তিনটি মূল স্ট্রিমের দিকে তাকানো যাক:
বিজ্ঞান (Science): যারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নাসা’র বিজ্ঞানী, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হতে চাও, তাদের জন্য। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত, জীববিজ্ঞান—এই বিষয়গুলো শেখা থাকে।
বাণিজ্য (Commerce): ভবিষ্যতে ব্যবসা করতে চাও? চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ব্যাংকার, একাউন্ট ম্যানেজার হতে চাও? তাহলে এই স্ট্রিম উপযুক্ত। এখানে হিসাববিজ্ঞান, বিজনেস স্টাডিজ, অর্থনীতি শেখা হয়।
মানবিক (Arts): লেখালেখি, ইতিহাস, রাজনীতি, আইন, মিডিয়া বা শিক্ষা ক্ষেত্রে যেতে চাও? তাহলে Arts-ই তোমার পথ। এখানে বেশি করে পড়ানো হয় সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞান।
৩. পেশা সম্পর্কে ধারণা নাও

বিভিন্ন পেশার সম্পর্কে যত বেশি জানতে পারো, তত ভালো। তোমার স্কুলের শিক্ষক, পরিবারের বড় ভাইবোন বা ইউটিউব, গুগলের সাহায্যে বিভিন্ন পেশার বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানো।
উদাহরণ:
একজন সফটওয়্যার ডেভেলপার দিনে কীভাবে কাজ করেন?
সাংবাদিকদের দিন কেমন কাটে?
একজন ইঞ্জিনিয়ার কীভাবে পড়াশোনা করেন?
এভাবে জেনে নিতে পারলে নিজের লক্ষ্যও পরিষ্কার হবে।
৪. অনলাইন শেখা – স্কিলই ভবিষ্যতের শক্তি

আজকের দিনে শুধু বই পড়লেই হবে না। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন YouTube, Coursera, Unacademy, Khan global studies, Skillshare-এর মতো সাইটে ফ্রি এবং পেইড কোর্স পাওয়া যায়।
তুমি এখন থেকেই শিখতে পারো:
কম্পিউটার চালানো
গ্রাফিক ডিজাইন
ভিডিও এডিটি
স্পোকেন ইংলিশ
কোডিং (Python, HTML, JAVA etc.)
পাবলিক স্পিকিং
এসব স্কিল ভবিষ্যতের চাকরি বা নিজের ব্যবসায় খুব কাজে লাগবে।
৫. প্রেরণাদায়ক কিছু বাস্তব উদাহরণ
ড. এপিজে আব্দুল কালাম: সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে হয়েছেন ভারতের ‘মিসাইল ম্যান’।
সত্য নাদেলা: ভারত থেকে পড়াশোনা করে হয়েছেন Microsoft-এর CEO।
সাবিনা ইয়াসমিন: মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে হয়েছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়িকা।
তাদের সবাই মাধ্যমিক পেরিয়ে জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই পার করে নিজেদের পথ গড়ে নিয়েছেন। তুমি পারবে না কেন?
৭. ভুল হতেই পারে, কিন্তু থেমে যেয়ো না …
জীবনে কেউই একবারে ঠিক রাস্তা খুঁজে পায় না। ভুল হবে, পরিবর্তন আসবে—এটাই স্বাভাবিক। সাহস রাখতে হবে, চেষ্টা করে যেতে হবে। সব বড় সাফল্যই ছোট ছোট ভুল ও শেখার ভিতর দিয়ে আসে।
তুমি এখন এমন একটা সময়ে দাঁড়িয়ে আছো, যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এই সময়টা তোমার স্বপ্ন দেখার, চেষ্টা করার এবং নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার।
বিশ্বাস রাখো—তুমি যা চাও, সেটা তুমি অর্জন করতে পারো। শুরুটা আজই করো। ভবিষ্যৎ তোমার অপেক্ষায় আছে।
Editors – Mr. Jay