শিরোনাম : বিরাট কোহলির টেস্ট অবসর : এক বিদায়ে শেষ হলো একটি বিরাট যুগ

Table of Contents

ভূমিকা :

ভারতীয় ক্রিকেটের এক মহীরুহ, বিরাট কোহলি অবশেষে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন। বহুদিন ধরেই এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল ক্রিকেটমহলে—কবে অবসর নেবেন কোহলি? অবশেষে সেই দিনটি এসে গেল। ২০২৫ সালের মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি ঘোষণা করেন, আর কখনো সাদা জার্সিতে ২২ গজে দেখা যাবে না তাঁকে। এই ঘোষণায় একদিকে যেমন হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়েছে কোটি ভক্তের, তেমনি অন্যদিকে শুরু হয়েছে তাঁর অবিস্মরণীয় ক্যারিয়ার নিয়ে স্মৃতিচারণ।

বিরাট কোহলির টেস্ট অভিষেক :

বিরাট কোহলির টেস্ট অভিষেক হয় ২০১১ সালের জুন মাসে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। শুরুটা ছিল খুব একটা চমকপ্রদ নয়। তবে ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে গড়ে তোলেন ভারতের টেস্ট দলে অপরিহার্য একজন হিসেবে। ব্যাট হাতে ধারাবাহিকতা এবং নেতৃত্বের গুণে তিনি হয়ে ওঠেন ভারতের অন্যতম সফল অধিনায়ক।

টেস্ট ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য সাফল্য :

বিরাট কোহলির টেস্ট ক্যারিয়ার ছিল বর্ণময় এবং পরিপূর্ণ। তিনি ১১১টি টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছেন, যেখানে সংগ্রহ করেছেন ৮৭৬৫ রান, গড় ছিল ৪৯.৫৩। রয়েছে ২৯টি টেস্ট সেঞ্চুরি এবং ২৮টি হাফ সেঞ্চুরি। তাঁর ক্যারিয়ারের হাইলাইটগুলোর মধ্যে রয়েছে:

২০১৬-২০১৯: এই সময়ে কোহলি ছিলেন তার ক্যারিয়ারের চূড়োয়। একের পর এক টেস্ট সেঞ্চুরি, বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে, তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে সেরা ব্যাটসম্যানদের কাতারে।

২০১৮ ইংল্যান্ড সফর: কোহলি এই সিরিজে করেন ৫৯৩ রান, প্রমাণ করেন তিনি কেবল উপমহাদেশের ব্যাটসম্যান নন, বরং বিশ্বের যেকোনো কন্ডিশনে সফল হতে পারেন।

ক্যাপ্টেন্সিতে জাদু: কোহলির অধিনায়কত্বে ভারত জয় করেছে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ (২০১৮-১৯)—যা ছিল ইতিহাসে প্রথম। তাঁর নেতৃত্বে ভারত জিতেছে ৪০টিরও বেশি টেস্ট।

অবসরের ঘোষণা এবং প্রতিক্রিয়া :

২০২৫ সালের ১৮ মে, বিরাট কোহলি সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি আবেগঘন বার্তায় জানান যে তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। বার্তায় তিনি লেখেন:

“এটা সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না। টেস্ট ক্রিকেট আমার হৃদয়ের খুব কাছের। তবে এখন সময় এসেছে নতুন প্রজন্মের জন্য জায়গা করে দেওয়ার। আমি কৃতজ্ঞ ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে।”

তাঁর এই ঘোষণার পরপরই ক্রিকেট জগতের বহু কিংবদন্তি, সহকর্মী এবং ভক্তরা তাঁকে শুভেচ্ছা জানান এবং তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। বিসিসিআই থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে ধন্যবাদ জানানো হয়।

হঠাৎ কেন অবসর ?

যদিও কোহলি নিজে কোনো শারীরিক অসুস্থতার কথা বলেননি, তবে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে কিছু কারণ এর পেছনে কাজ করেছে:

  1. ব্যক্তিগত জীবন: পরিবার ও সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানোর তাগিদ ছিল অন্যতম কারণ।
  2. শারীরিক চাপ: দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে অবিরাম খেলার ফলে শারীরিক ও মানসিক চাপ ছিল প্রবল।
  3. নতুন প্রজন্মকে সুযোগ: কোহলি সবসময়ই চাইতেন নতুনরা সুযোগ পাক। তাই সময় থাকতে নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন।

বিরাট কোহলি : অনুপ্রেরণার নাম :

শুধু পরিসংখ্যান নয়, বিরাট কোহলি তরুণদের কাছে এক চিরন্তন অনুপ্রেরণা। তাঁর ফিটনেস, অধ্যবসায় এবং নেতৃত্বগুণ তাঁকে আলাদা করে তুলেছে। তিনি ক্রিকেটকে শুধুমাত্র খেলার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখেননি, বরং এটিকে একটি লাইফস্টাইল হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

অবসরের পর কোহলি ঠিক কী করবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হয়তো ওয়ানডে ও টি-২০ ফর্ম্যাটে কিছুদিন খেলবেন এবং ভবিষ্যতে ক্রিকেট কোচিং বা ধারাভাষ্যকার হিসেবেও দেখা যেতে

পারে তাঁকে।

বিরাট কোহলির টেস্ট অবসর কেবল একজন ক্রিকেটারের বিদায় নয়, বরং এক যুগের সমাপ্তি। তাঁর ব্যাটিং, তাঁর আগ্রাসন, তাঁর নেতৃত্ব – সবকিছু মিলে তিনি হয়ে উঠেছিলেন কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর হৃদয়ের ‘কিং কোহলি’। তাঁকে আর টেস্ট সাদা পোশাকে না দেখা গেলেও, তাঁর অবদান চিরকাল অমলিন থাকবে ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে।

কী আপনার মতামত বিরাট কোহলির অবসর নিয়ে? নিচে কমেন্ট করে জানান এবং jeevika 24.com-এর সঙ্গে যুক্ত থাকুন আরও আপডেটের জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *